উগান্ডায় বৃক্ষরোপণে প্রেরণা এক নারী
বন নিধনের ক্ষেত্রে উগান্ডা অন্যতম কুখ্যাত দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এক নারী সেই বিপর্যয় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে ব্যাপক বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সেই কাজে উদ্বুদ্ধ করতে চান তিনি।
বিপর্যয়ের সময় পর্যন্ত প্যাট্রিসিয়া আরিওকোট ১৫ ঘণ্টা ধরে এই গাছটিকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন। কিন্তু একটি বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন তার বিশ্ব রেকর্ডের প্রচেষ্টা বানচাল করে দিয়েছিল। তবে উগান্ডার এই অ্যাক্টিভিস্ট হাল ছাড়েননি। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি একটানা ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই গাছটি জড়িয়ে ধরে ছিলেন৷ ফলে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছে।
বিষয়টিকে আমোদের স্টান্ট মনে হলেও এমন উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট রয়েছে। প্যাট্রিসিয়া সে বিষয়ে নজর আকর্ষণ করতে চান। তার মতে, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার বিশাল মাত্রা রয়েছে। বিশ্ব সবে সে দিকে নজর দিতে শুরু করেছে৷ আমাদের গতি বাড়িয়ে বৃক্ষরোপণ করতে হবে, কারণ প্রাকৃতিক জঙ্গল উধাও হয়ে গেছে। আমরা গাছগুলি ব্যবহার করছি বটে, কিন্তু সেগুলির জায়গায় নতুন গাছ লাগানোর পরোয়া করছি না।”
সেই পরিস্থিতি উগান্ডার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রজোয্য৷ বন নিধনের হারের ক্ষেত্রে সে দেশ বিশ্বের অন্যতম কুখ্যাতদের অন্যতম। ‘গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ’ নামের অনলাইন ট্র্যাকিং পোর্টালের সূত্র অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশটি দশ লাখ হেক্টরের বেশি জঙ্গল হারিয়েছে।
প্যাট্রিসিয়া সেই ক্ষতি মেনে নিতে প্রস্তুত নন। তার মতে জলবায়ু সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে গাছই হলো চাবিকাঠি। তিনি বলেন, ‘‘গাছের অনেক সুবিধা রয়েছে৷ আমি আপনাকে বলতে পারি, যে এই মুহূ্র্তে আমি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে তাজা অক্সিজেন গ্রহণ করছি। কারণ আমি সরাসরি একটি গাছ থেকে সেটি পাচ্ছি। একই সঙ্গে সেটি আমার কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে নিচ্ছে।”
তবে প্যাট্রিসিয়ার জন্য শুধু গাছ নিয়ে কথা বলা যথেষ্ট নয়৷ তিনি হারিয়ে যাওয়া গাছ আবার উগান্ডায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে চান৷ সেটা সম্ভব করতে তাঁর তরুণ প্রজন্মের সহায়তার প্রয়োজন৷ তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ভালো আইডিয়াও চাই৷ এ ক্ষেত্রে গাছের বীজভরা কাঠের পেন্সিল কাজে লাগছে৷
রোপণ করা যায় এমন পেন্সিল নিয়ে প্যাট্রিসিয়া নিয়মিত সমাজে সচেতনা সৃষ্টির চেষ্টা চালান৷ প্রধানত উগান্ডার পূর্বাঞ্চলের স্কুলগুলিতেই তিনি সক্রিয়৷ ক্লাসে আজ ‘ট্রি এডুকেশন’ চর্চা চলছে৷ সেখানে বসে প্যাট্রিসিয়া বলেন, ‘‘যে চ্যালেঞ্জ তারা নিতে চলেছে, সেটা ঠিকমতো বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমি চাই, একটি বীজ নিয়ে তারা সেই প্রক্রিয়া শুরু করুক৷ নির্দিষ্ট এই পেন্সিলের মধ্যে বীজ রয়েছে৷ সেটা কাজে লাগিয়ে তারা পড়াশোনা করছে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেন্সিল গাছে পরিণত হবে৷ একটি গাছ কাটা হয়েছে৷ একটি গাছ লাগানো হবে৷ আমি চাই তারা এই মৌলিক বিষয়টি বুঝুক৷”
স্কুলপড়ুয়াদের গাছের মূল্য সম্পর্কে সচেতনা বাড়ানোর কাজে সাহায্যের আশা করছেন এই অ্যাক্সিভিস্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন বৃক্ষরোপণের কথা বলি, তখন শুধু মাটিতে পুঁতে চলে গেলে হবে না৷ পানিও দিতে হবে৷”
এই স্কুলে গাছ ও বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে প্যাট্রিসিয়ার শিক্ষার ফলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ শিক্ষক হিসেবে ফ্রান্সিস এসাবু মনে করেন, ‘‘একেবারে ঠিক সময়ে এটা হচ্ছে, যখন আমাদের অঞ্চল ও দেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ আমরা সবাই জানি সমাজ কোন মাত্রায় গাছপালা ধ্বংস করে চরম জলবায়ু পরিবর্তন ঘটাচ্ছে৷ ফলে এটাই ভালো সময়৷”
বীজ থেকে এমন গাছের আকার নিতে কয়েক দশক সময় লাগে৷ ঠিক সে কারণেই যত দ্রুত সম্ভব সেগুলিকে আগলে রাখা উচিত বলে প্যাট্রিসিয়া মনে করেন৷
অনন্যা/এআই