Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইংল্যান্ডের খাদ্যসম্ভারে ‘রাজার সম্মান’ পায় বিশেষ চিজ

বাঙালিদের কাছে ইলিশ মাছের যেমন কদর তার তুলনা মেলা ভার। তবে ইংল্যান্ডের মানুষের কাছে এক বিশেষ ধরনের চিজ রাজার সম্মান পায়৷ হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় বেশ যত্ন ও পরিশ্রমের সঙ্গে সেই চিজ প্রস্তুত করা হয়।

চিজে ছাতা পড়ে গেলেও ইংল্যান্ডের মানুষ তাতে খুশি। ‘ব্লু স্টিলটন যে ইংল্যান্ডের চিজ জগতের রাজা হিসেবে পরিচিত, সেটা অনেকেই জানে না। শুধু তাই নয়, ফ্রান্সের শ্যাম্পেনের মতো এই চিজও শুধু নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে তৈরি করার অনুমতি রয়েছে।

কীভাবে সেই চিজ তৈরি হয় এবং তার জন্য ছত্রাকেরই বা কেন প্রয়োজন হয়? ইংল্যান্ডের তিনটি কাউন্টিতে স্টিলটন চিজ তৈরির অনুমতি রয়েছে৷ সেগুলি হলো লাইচেস্টারশায়ার, নটিংহামশায়ার এবং ডার্বিশায়ার৷ সেখানকার মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠান স্টিলটন চিজ তৈরি করে৷ সেই চিজের নমুনা চেখে দেখতে ডার্বিশায়ারে যাওয়া যায়৷ সবচেয়ে ছোট স্টিলটন উৎপাদক হার্টিংটন ক্রিমারির গরু সেখানকার মাঠে চরে বেড়ায়৷

স্টিলটন প্রস্তুতকারকদের মধ্যে ডায়না অ্যালকক একমাত্র নারী৷ দশ বছর ধরে তিনি সেখানে নিখুঁত স্টিলটন তৈরির কাজ করে চলেছেন৷ ডায়না বলেনস ‘‘আমাদের কাছে চিরায়ত ফ্রিজিয়ান ক্রস কাউ রয়েছে, যেগুলি ঠিক আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দুধ দেয়৷ সেই দুধের মধ্যে ফ্যাট ও প্রোটিনের মাত্রা নিখুঁত হতে হবে৷”

ডায়না সবার আগে পাস্তুরাইজড দুধ স্টার্টার কালচার, রেনেট ও মোল্ড কালচারের সঙ্গে মেশান৷ তাঁর মতে, ‘‘এই স্তরে দুধের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান হওয়া সত্যি জরুরি৷ স্টিলটন তৈরি করতে গেলে প্রতিটি ধাপে সত্যি খুব যত্ন নিতে হয়৷ সদ্যোজাত শিশুর প্রতি যেমন আচরণ করতে হয়৷”

পরের দিনও প্রক্রিয়া চলতে থাকে৷ ডায়না তথাকথিত চি়জ কার্ডের অম্লতার মাত্রা পরিমাপ করেন৷ সেটা নিখুঁত হলে তাতে লবণ যোগ করা হয়৷ তারপর সেই চিজ কার্ড ভালো করে মাখা হয়৷ এটাই একমাত্র পর্যায়, যেখানে হাত লাগানো হয় না৷ ডায়না মনে করিয়ে দেন, ‘‘সেটি অত্যন্ত হালকা দই হতে হবে৷ আমরা আখরোটের মাপের টুকরো চাইছি৷ ভালো করে দেখলে বুঝবেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন মাপের দই রয়েছে৷ আমরা ঠিক সেটাই চেয়েছিলাম৷”

তারপর যন্ত্রে মাখা চিজ কার্ড স্টিলটনের নিজস্ব ছাঁচে ঢালা হয়৷ যথেষ্ট তরল ঝরাতে চার দিন সময় লাগে৷ ছাঁচ সরিয়ে ফেলার পর ডায়না প্রতিটি কাঁচা চিজের উপরের অংশ বন্ধ করে দেন৷ সেই প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিতে ডায়না অ্যালকক বলেন, ‘‘ব্লু মোল্ড নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আমরা আসলে বাইরের সব ছিদ্র বন্ধ করতে চাই৷ খোলা থাকলে অক্সিজেন ঢুকে ব্লু মোল্ড সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে৷ কিন্তু আমরা সেটা চাই না৷ প্রক্রিয়ার আরো কয়েক ধাপের পর আমরা সেটা করতে চাই৷”

তারপর চিজ রাইপেনিং চেম্বারে আনা হয়৷ ডায়নাকে অনেক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত সেই চিজ উলটাতে হয়৷ ডায়না বলেন, ‘‘সব আর্দ্রতা ধীরে ধীরে চিজের নীচের অংশে গড়িয়ে পড়ুক, আমরা সেটা চাই না৷ বেশি সময় ধরে অপরিবর্তিত রাখলে আর্দ্রতা নীচে গড়িয়ে পড়বে৷ আমাদের ব্যবসায় সেই অবস্থার চিজকে হাতির খোরাক বলা হয়৷”

চার ও ছয় সপ্তাহ পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হয়৷ উপরের অংশ আবার খুলে দিতে ইস্পাতের তৈরি চিকন সূঁচ দিয়ে চিজের মধ্যে গর্ত করা হয়৷ ডায়না বলেন, ‘‘এই পর্যায়ে আমরা আসলে চিজের মধ্যে অক্সিজেন ঢোকাতে চাই, যাতে তার মধ্যে মোল্ড বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে৷ সেটা ঘটলে দই ভেঙে যায়৷ ফলে বেশ দানা দানা এবং প্রায় শুকনা অবস্থা থেকে চিজের স্বাদ মাখামাখা, মাখনের মতো হয়ে যায়৷ গোটা চিজ জুড়ে নীল শিরা ছড়িয়ে পড়ে৷”

আট সপ্তাহ পর এবার চিজের স্বাদ চেখে দেখার পালা৷ ডায়না বলেন, ‘‘সব জায়গায় নীল রং ছড়িয়ে পড়েছে৷ বেশ ক্রিমের মতো সুন্দর রং ধরছে৷ পেছন দিকেও মাখনের মতো অনুভূতি পাওয়া যাচ্ছে৷ কোনো বেমানান স্বাদ নেই, বেশ মিষ্টি ও বাদামের মতো খেতে লাগছে৷ সুন্দর গন্ধ৷ চিজের নীল অংশও আলাদা করে টের পাচ্ছি৷ একেবারেই তিতা নয়, ক্রিম ও মাখনের মতো খেতে৷ একেবারে নিখুঁত৷”

প্রতি বছর প্রায় আট হাজার টন স্টিলটন চিজ উৎপাদন করা হয়৷ গোটা বিশ্বে সেই চিজ বিক্রি করা হয়৷ ইংল্যান্ডে স্টিলটনকে রাজা বলা হয়৷ আপনার দেশেও কি কোনো খাদ্যের এমন কদর রয়েছে?

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ