নাইজেরিয়ার মৃৎশিল্পে চিরায়ত ঐতিহ্য
নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উপজাতিদের ত্বকের উপর দাগ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিদর্শন। মৃৎশিল্পের মধ্যেও সেই নক্সা দেখা যায়। এক শিল্পী সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সেই বৈশিষ্ট্য বাকি বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন।
ইনস্টাগ্রামের ফিডে এমনটা কখনো দখেছেন কি? দেখলেও জানেন কি যে সেটা নাইজেরিয়ার মৃৎশিল্প? কিন্তু নাইজেরিয়ার মাটির পাত্র ইনস্টাগ্রামে কেন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে? সেরামিক আর্টিস্ট হিসেবে ইদ্রিস ক্লে সেই কৃতিত্বের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আমার ইনস্টাগ্রাম পোস্ট বা আমার সোশাল মিডিয়া পোস্টগুলি ভাইরাল হওয়ার কথা বলছি৷ আমি চিরকালই যে সেটা করে আসছি, সেটাই আমার মূল অবদান৷ আমার কাজের ধারাবাহিকতা রয়েছে৷ এমনকি যখন কেউ দেখছে না, আমার কাজ, আমার একটা পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল।”
ইদ্রিস ওলাবোদ নাইজেরিয়ার পপ সংগীতকে ‘ভাইরাল সেন্সেশন’ করে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন৷ তিনি কীভাবে সেই ‘হাইপ’ সৃষ্টি করেন এবং তার সঙ্গে ‘স্কারিফিকেশন’-এর সম্পর্কই বা কী? এই প্রশ্নের জবাবে ইদ্রিস ক্লে বলেন, ‘‘আরও দর্শকের কাছে আমার সৃষ্টিগুলি পৌঁছে দিতে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম৷ আজকাল কে না সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে! ইনস্টাগ্রামে যত নজর কাড়া যায়, যত সক্রিয় থাকা যায়, নিজের সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরে তত বেশি দর্শক ও গ্রাহক পাওয়া যায়৷ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মৃৎশিল্পের ক্ষেত্রে সেটা বিশেষভাবে প্রজোয্য৷ জানেন তো, নাইজেরিয়ায় অনেক উপজাতি রয়েছে৷ তাদের মৃৎশিল্পের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে৷ আমার মতে, লাদি কোয়ালির শৈলি বেশ জনপ্রিয়৷ কারণ সবচেয়ে পরিচিত এবং সবচেয়ে নিখুঁত কৌশলগুলির মধ্যে সেটি পড়ে৷”
ইয়াবা কলেজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই সেরামিক আর্টিস্ট অনন্য এক কৌশলের কারণে পরিচিতি পাচ্ছেন৷ সেই কাজের সঙ্গে স্কারিফিকেশনের কী সম্পর্ক, সবার আগে সেটা বুঝতে হবে৷ তিনি কীভাবে এমন ভাইরাল কনটেন্ট সৃষ্টি করেন তা-ও জানতে হবে৷ ইদ্রিস ক্লে জানান, ‘‘এই নিয়ে আমি তিন দিন ধরে এটা গড়ে তুলছি৷ এটাকে লেদার হার্ড স্টেজ বলা হয়, কারণ এই পর্যায়ে এটা অনেকটা চামড়ার মতো মনে হয়৷ সেই সব অংশ ট্রিম বা কাটছাঁট করা যায়৷ রং লাগানো বা অন্যান্য রদবদলও সম্ভব৷ নাইজেরীয় হিসেবে আমি মূলত নাইজেরিয়া বা আফ্রিকার কৌশল প্রয়োগ করছি, কারণ সে সব আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ আমি আমাদের কাদামাটি ও সবকিছু ব্যবহার করি৷ আধুনিক শৈলি সৃষ্টি করতে আমি ডিজাইন, আকার, রংয়ে আধুনিকতা ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক মানের ছোঁয়া আনছি৷ কারণ, সেটাই আমাকে অনন্য করে তোলে এবং ঐতিহ্যগত অংশ থেকে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেয়।”
তাঁর সেরামিক সৃষ্টিকর্ম যে ইয়োরুবা ঐতিহ্য থেকে প্রেরণা নিয়েছে, ইদ্রিস তাঁর সোশাল মিডিয়া পোস্টগুলিতে তা স্পষ্ট করে দেন৷ কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকর্মের স্কারিফিকেশন বিশ্বের দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর তাগিদের পেছনে কারণ কী? ইদ্রিস ক্লে বলেন, ‘‘এই স্কারিফিকেশন এবং আমার কাজের মধ্যে সেই কৌশল প্রয়োগের চেষ্টার কারণ আমি বুঝিয়ে বলতে চাই৷ আমি চেয়েছিলাম, আপনি অন্তরাত্মার কনসেপ্ট বুঝুন৷ আমি সেই কৃতজ্ঞতা মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই৷ তাদের জানাতে চাই যে এই সব মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে৷ পূর্বপুরুষের কাজ বাঁচিয়ে রাখাই সেই পথ৷ আমি জানি, এটা আধ্যাত্মিক, পূর্বপুরুষদের অবদান৷ অতীতের অর্থবহ কিছু বিষয় নিয়ে আসাই সেটা করার উপায়৷ এখন মানুষ সেগুলি উপেক্ষা বা অবহেলা করে৷ অথবা মানুষ যা আছে, তা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না৷ ত্বকের উপর উপজাতির নিজস্ব নক্সা পছন্দ করে না৷ কারণ এ সবের গভীর অর্থ রয়েছে৷ সেগুলি মোটেই ডিজাইন নয়।”
নিজের দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখতে ইদ্রিস তার রিলগুলিতে ইন্টারঅ্যাক্টিভ বিষয় এবং নেপথ্যের অনেক কিছু দেখান৷ সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইদ্রিসের পেশাদারিত্ব সবার নজর কাড়ছে। তবে নাইজেরিয়ার এই মৃৎশিল্পী শরীরের উপর কাদামাটির উপকারিতা সম্পর্কে এত জানেন, যা বিস্ময়ের কারণ হতে পারে।
নাইজেরিয়া থেকে ইদ্রিস সোশাল মিডিয়ায় আলোড়ন তুলছেন। তার তৈরি পাত্র বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে স্থান পেয়ে নাইজেরিয়ার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও তার মর্ম ছড়িয়ে দিচ্ছে।
অনন্যা/এআই