পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্রাজিলের আলোকচিত্রী
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, সে বিষয়ে আর কোনো সংশয় নেই৷ ব্রাজিলের এক ফটোগ্রাফার নিজের আলোকচিত্রের মাধ্যমে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃতির আরো কাছে আনার চেষ্টা করছেন৷
সেবাস্তিয়াঁও সালগাদো গোটা বিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন৷ বেশ কয়েকবার অ্যামাজন অঞ্চলেও পা রেখেছেন৷ তিনি নিজেকে সমাজবিজ্ঞানী বা নৃতত্ত্ববিদ মনে করেন না বটে, কিন্তু ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন৷ তাঁর মতে, ‘‘আমরা আজ শহরকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছি৷ নিজেদের গ্রহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি৷ প্রায় এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীর মতো আমরা আমাদের গ্রহে বাস করছি৷ নিজেদের গ্রহকেই আর চিনি না৷ দূর থেকে সেই গ্রহকে দেখি, গ্রহের উপর দিয়ে উড়ে যাই, গ্রহের কাছে রাস্তার উপর গাড়ি চালাই৷ কিন্তু গ্রহের উপর খুব কমই যাই৷”
নিজের গভীর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সেবাস্তিয়াঁও সালগাদো মনে করেন, ‘‘অ্যামাজন অঞ্চলেই সম্ভবত এই গ্রহের সবচেয়ে বেশি সংস্কৃতির ঘনত্ব দেখা যায়৷ ব্রাজিলে ১৯২টি উপজাতি রয়েছে, যারা ১৮০টি ভাষা বলে৷ ১৯২টি ভিন্ন সংস্কৃতি৷ সেটাই হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক ঘনত্ব৷ সেটা আমাদের অতীতের কাহিনি৷ মানবজাতির আদিম ইতিহাস সেখানে রয়েছে৷ সেটা একটা অভাবনীয় মাত্রা৷ প্রাগৈতিহাসিক কাহিনি সংরক্ষণ করতে পারলে তবেই আমরা মানবজাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবো৷ আমরা বড় সংকটের সূচনাপর্বে রয়েছি৷ আমরা অভূতপূর্ব খরা দেখছি৷ আমরা অভাবনীয় ঘূর্ণীঝড় সৃষ্টি হতে দেখছি৷ কীভাবে পানির স্তর বেড়ে চলেছে, তা দেখতে পাচ্ছি৷ আমরা জমি হারাতে শুরু করেছি৷ উষ্ণায়নের এক মুহূর্তের পর আর আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যাবে না৷”
প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার ব্রাজিলের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু সে বিষয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে৷ সালগাদো বলেন, ‘‘আমার মতে, সেই কাজের সময় এখন এসে গেছে৷ তার জন্য আমাদের অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে ওঠার প্রয়োজন নেই৷ উষ্ণায়নের গতি কমানো ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আমাদের সহযোগিতার পথ বেছে নিতে হবে৷”
২০ বছর ধরে তিনি পারিবারিক ব্যবসার জন্য পুনর্বনায়ন করেছেন৷ তরুণ প্রজন্ম ভিন্ন পথে অগ্রসর হবে বলে তাঁর আশা৷ সালগাদো মনে করেন, ‘‘এর জন্য অ্যাক্টিভিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই৷ বরং টিকে থাকার সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷ অ্যাক্টিভিজম নয়, এটা অস্তিত্বের প্রশ্ন৷ আমি তরুণ প্রজন্মকে গ্রহে ফিরে যাবার পরামর্শ দেবো৷ আমরা অবশ্যই আর জঙ্গল বা গুহায় বাস করবো না৷ কিন্তু আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে আমাদের গ্রহে ফিরে যেতেই হবে, পুনর্গঠনে সাহায্য করতে হবে৷ পৃথিবীকে, আমাদের গ্রহকে ভালোবাসতে আমরা ফিরে আসছি৷ আমরা ফিরে এসে অস্বীকার করছি, যে আমরা আসলে এলিয়েন বা আমাদের গ্রহ থেকে বিচ্ছিন্ন শহুরে মানুষ৷ তোমাদের ফিরে আসতেই হবে, আমাদের দেখতে আসতে হবে৷ জমি, গাছ, নদী, পাহাড় ভালোবাসতে হবে৷ বুঝতে পারছো? আবার গ্রহ দেখে মুগ্ধ হও৷ পৃথিবীর কোনো জিনিস দেখে ভয় পেও না৷
সেবাস্তিয়াঁও সালগাদোর সৃষ্টিকর্ম গ্রহ হিসেবে পৃথিবীর প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ৷ প্রায় ৮০ বছর বয়সি এই মানুষটি চান, আমরা যেন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পদ্ধতি সম্পর্কে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করি৷
অনন্যা/এআই