বুঝে দাঁতের যত্ন নিলেই ভালো
কথায় বলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না৷ দাঁতের প্রকৃত যত্ন না নিলে মুখের মধ্যে কী ঘটে, সে বিষয়ে অনেকের কোনো ধারণা নেই৷ দাঁত সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকলে ঠিক সময়ে অনেক সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মানুষ ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ে তার দেখা পাওয়া যায় না৷ কিন্তু মাড়ির নীচেই দাঁত আসলে সুপ্ত অবস্থায় থাকে৷ প্রায় ছয় মাস পর সেই দাঁত জেগে ওঠে৷ প্রথম দুধের দাঁতগুলি বেরিয়ে আসে৷ তারপর দাঁতের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং সবশেষে ২০টি ছোট দাঁত সব কিছু চিবিয়ে খায়৷
কিন্তু চোয়াল বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও মিল্ক টিথ ছোটই থেকে যায়৷ ছয় বছর বয়স থেকে সেগুলি একে একে পড়ে গিয়ে শেষে ৩২ পাটি দাঁত সৃষ্টি হয়৷
চোয়ালের মধ্যে স্থায়ী দাঁতগুলি বাড়তে থাকে৷ একই সঙ্গে দুধের দাঁতের রুট বা শিকড় লোপ পায়৷ সারা জীবন ধরে দাঁতগুলিকে বিশাল পরিমাণ খাদ্য চিবোতে হয়৷ সেই প্রক্রিয়ার সময়ে কিছু অবশিষ্ট খাদ্য দাঁতের উপর আটকে থাকে৷ ফলে অণুজীবের খোরাকের অভাব হয় না৷
দাঁত অত্যন্ত স্থিতিশীল হওয়ায় তার ফলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷ দাঁতের বাইরের স্তর হিসেবে এনামেল আমাদের শরীরের সবচেয়ে শক্ত টিস্যু দিয়ে তৈরি৷
তবে স্ট্রেপটোককাস মিউটান্সের মতো ব্যাকটিরিয়া বিপাকের মাধ্যমে মূলত চিনি এবং অন্যান্য শর্করাগুলিকে অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে৷ সেটাই অত্যন্ত স্থিতিশীল দাঁতের এনামেলের দুর্বলতার জায়গা৷
সেই সব অ্যাসিড খনিজ দ্রবিভূত করে এবং এনামেলের উপরের অংশে ছিদ্র সৃষ্টি করে৷ ক্ষুদ্র অণুজীব দাঁতের উপর হামলা চালাতে পারে৷ তখন দাঁতের এনামেলের উপর গর্ত সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়৷
দাঁত নিজেই ছোটখাটো ক্ষতি মেরামত করে নিতে পারে৷ বিশেষ করে লালার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম, ফসফেট ও ফ্লোরাইড দাঁতের উপরে গিয়ে আবার মিনারেল ভরিয়ে দিতে পারে৷ তাছাড়া লালা মুখের মধ্যে অ্যাসিডও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে৷ কিন্তু ক্যারিস বা ক্ষয় যদি এনামেলের মধ্য দিয়ে তার নীচের ডেন্টিন পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখন আর তাকে থামানো যায় না৷
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই পর্যায়ে এসে আমরা প্রথম সেই সমস্যা টের পাই৷ কারণ এনামেলের তুলনায় ডেন্টিনের মধ্যে স্নায়ুর অগ্রভাগ রয়েছে৷ দাঁতের ভেতরে স্নায়বিক টিস্যুর মধ্যে প্রদাহ দেখা দিলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়৷
দূর্ভাগ্যবশত অ্যাডভান্সড ক্যারিস থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র সরাসরি হস্তক্ষেপ সাহায্য করে৷ ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতের টিস্যু তখন দূর করতে হয়৷ সাহসি সেই দাঁতে তখন ফিলিং বা ক্রাউন বসানো হয়৷ সেগুলির উপাদান হতে পারে সোনা, কম্পোজিট উপাদান অথবা পোর্সেলিন৷
কিন্তু রুট টিস্যু মরে গেলে দাঁতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ সেই দাঁতেরও মৃত্যু ঘটে৷ কিন্তু সেটাই অন্তিম অবস্থা নাও হতে পারে৷ রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে প্রদাহে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়বিক টিস্যু দূর করে দাঁত সিল করে দেওয়া হয়৷ এভাবে মৃত দাঁতও কাজ চালিয়ে যেতে পারে৷ তাতেও কাজ না হলে সেই দাঁতকে বিদায় জানাতে হয়৷ কৃত্রিম দাঁত সেই শূন্যস্থান পূরণ করে৷
দাঁতের ভালো যত্ন, নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখানো এবং কম চিনি খাওয়ার মাধ্যমে বেশি বয়স পর্যন্তও দাঁত মজবুত রাখা যায়৷
অনন্যা/এআই