অতিরিক্ত কেনাকাটা মানসিক ফোবিয়া
শপিং অ্যাডিকশন, শপাহলিক, অতিরিক্ত কেনাকাটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা। তবে এইসব নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো কোন উল্লেখযোগ্য সতর্কতা বার্তা নেই বললেই চলে। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮% মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশের মানুষ ও দিন দিন এই সমস্যায় ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে এবং দিনশেষে দেখা যাচ্ছে নিজের ইনকাম করা টাকাই হোক অথবা বাসা থেকে নেওয়া হাত খরচে হোক না কেন মাসের শেষে চলার মত বিন্দু পরিমাণ অর্থ থাকে না।
বর্তমান সময়ে যে পরিমাণ অনলাইন উদ্যোক্তা এবং দোকানের সংখ্যা বেড়েছে মানুষের চাহিদায় এবং পছন্দের পরিবর্তনের পাশাপাশি বিষয়টা বদঅভ্যাসে পরিণত হচ্ছে।
কখনো বা রাস্তার পাশে দিয়ে হাঁটছে কখনো বা মার্কেটের সামনে দিয়ে কখনো বা রাতে কিংবা দিনে যখন তখন ফেসবুক স্ক্রোল করে এটা সেটা পছন্দ হয়েই যাচ্ছে এবং নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছুই কিনে ফেলছে। যা অহেতুক ব্যয় এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হচ্ছে। এদেরকে মূলত শোপাহলিক বলা হয় তবে শোপাহলিক অনেকগুলো ধরনের রয়েছে যেমন-
১-কম্পালসিভ শপাহলিক বলতে কোনো মানুষ মানসিক ভাবে দূর্বল থাকে এবং সেটাকে কাটিয়ে উঠার জন্য নানান ধরনের জিনিস কিনতেই থাকে।
২-ট্রফি শপাহলিক মূল ব্যাখ্যা হল কোন একটা জিনিস পছন্দ হয়েছে এবং সেটা যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের মন মত হচ্ছে তার জন্য সে অনবরত ওই একই জিনিস কিনেই যাচ্ছে।
৩-স্ট্যাটাস শপাহোলিক মূলত সামর্থ্যের বাহিরে গিয়েও নিজের ইমেজকে সকলের সামনে খুব রিচ ভাবে প্রকাশ করতে চায় বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নানান ধরনের জিনিস কিনেই যাচ্ছে তারাই হলো স্ট্যাটাস শপাহলিক।
৪-বুলিমিক শপাহলিক বলতে তারা নিজেরাও জানে না তারা কি চায় এই কারণে একই জিনিস বারবার কিনে এবং সেটা আবার ফেরত দিতে যায়।
৫-বার্গইয়েন সীকার হচ্ছে তারা যখনই কোথাও কোনো ছাড় বা সেল দেখে তারা কোনভাবেই নিজেদেরকে কন্ট্রোল করতে পারে না এবং সেই জায়গায় তারা ননস্টপ ভাবে কিনতেই থাকে।
৬-কালেক্টরস মূলত কোন কিছু সে পছন্দ করে সংগ্রহ করতে এবং সেটা তার মন মত না হওয়া পর্যন্ত একই ধরনের জিনিস সে বারবার কিনতেই থাকে।
এই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মূল সমস্যা যেটা তারা যখন এই নেশায় আক্রান্ত হয়ে যায় এবং তা করতে না পারে তখন তারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায়। পাঁচ জোড়া জুতা আছে তো আরো দুই জোড়া লাগবে আলমারিতে অহেতুক নতুন দশটা জামা পড়ে আছে তো আরো পাঁচটা লাগবে কোনভাবেই যেন চাহিদা শেষই হচ্ছে না।
তবে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বেশ কিছু করণীয় পদক্ষেপে রয়েছে যেমন-
নতুন বিষয়ে মন দিন
কেনাকাটার মানসিক নেশা কাটাতে নতুন কোনো কাজ খুঁজে বের করুন। সেটা হতে পারে ঘরের কোনো কাজ, ব্যায়াম, গান শোনা, গল্প করা, রান্না করা, টিভি দেখা, মুভি দেখা, বই পড়া প্রভৃতি । এসব কাজে মনোনিবেশ করলে শপিংয়ের কথা ভোলাই স্বাভাবিক। তবে ব্যাপারটা হতে হবে ধারাবাহিক ও চর্চার। একদিন করে ছেড়ে দিলেই হবে না।
ইচ্ছাপূরনে নিয়ন্ত্রণ
ইচ্ছা করলেই কিনতে হবে—এই চিন্তা বাদ দিন। এ জন্য মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ইচ্ছার কাছে বশ মেনে নয়, নিজের প্রয়োজন বুঝে কেনাকাটা করুন। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন।
প্রচুর টাকা রাখবেন না নিজের কাছে
প্রয়োজনীয় শপিংয়ের একটা তালিকা প্রস্তুত করুন। সে অনুযায়ী টাকাপয়সা নেবেন, তার বেশি নয়। প্রয়োজনের বেশি টাকা নিয়ে শপিংয়ে যাওয়া মানে কিছু অতিরিক্ত পণ্য ঘরে আসবেই। প্রয়োজনে টাকা ব্যাংকে রাখুন।
জিনিসপত্র ভাগ করুন
রুচিশীল থাকতে কখনো আলমারিভর্তি কাপড়চোপড়ের দরকার পড়ে না। রুচিসম্মত প্রয়োজনীয় জামাকাপড়ই যথেষ্ট। অতিরিক্ত জামা-জুতো, সুগন্ধি, চুলের জেল থেকে শুরু করে অন্য জিনিসপত্র ভাই বোন বন্ধু বান্ধবের মধ্যে ভাগ করে দিন যেগুলো আপনার কাজে লাগে না। এছাড়া কেনাকাটায় সীমা লঙ্ঘন করবেন না।