ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হোক
পৃথিবীতে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব বলেই স্বীকৃত। তবে এই মানবজাতির মধ্যেও বিভাজন রয়েছে। লৈঙ্গিক বিভেদ। কেউবা পুরুষ আবার কেউবা নারী। তবে এ সমাজে এই দুইয়ের মধ্যবর্তী এক শ্রেণি রয়েছে যারা তৃতীয় লিঙ্গের বলেই স্বীকৃত। তবে এই তৃতীয় লিঙ্গের বাইরেও বর্তমানে ট্রান্সজেন্ডার বলে আরেকটি শ্রেণি যুক্ত হয়েছে। যারা পুরুষের শরীরে জন্মালেও নারীর আচার-আচরণ-অনুভূতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। আবার নারীর শরীরে জন্মেও পুরুষের মতো আচারণে অভ্যস্ত হন। আমাদের সমাজে তৃতীয় লিঙ্গ এবং ট্রান্সজেন্ডারশ্রেণিকে খুব একটা ভালোভাবে গ্টহণ করা হয় না! কিন্তু কেনো? তারাও মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীবের অংশ।
মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টি। সেখানে কারো ভাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ নেই। শরীরের গঠন স্রষ্টার দান। কিন্তু তবু এ সমাজ স্রষ্টার প্রতি সমর্পিত হলেও ব্যক্তিজীবনে ঠিক তার বিপরীত। পাড়া-প্রতিবেশীদের কটুক্তি, আড়চোখে তাকানো, বাজে ইঙ্গিত সবই এই শ্রেণিদ্বয়কে ভোগ করতে হয়। আমাদের সমাজের কলুষতা, ভণ্ড ও কপটতা এতটাই বেশি যে, এই শ্রেণিকে স্বাভাবিকভাবে বাঁচার সুযোগ এ সমাজ দেয় না। প্রত্যেকেই কলুষতাপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাদের বিচার করে।
তৃতীয় লিঙ্গের হোক বা ট্রান্সজেন্ডার তার প্রথম পরিচয় তিনি মানুষ। শারীরিক গঠন কারো হাতে সৃষ্ট নয়। বিধায় ব্যক্তি চাইলেই নিজেকে তার পছন্দমতো গঠন দিতে পারে না। তাহলে তো সবাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর মতো করে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতো। একজন মানুষের ভেতর ও বাহির সর্বদা এক হলে তবেই তিনি স্বস্তি পাবেন এটাই স্বাভাবিক। একটা টাইট-ফিটিং ড্রেসই বা কতক্ষণ পরিধান করে থাকা সম্ভব! আর এ তো জীবন। ড্রেস একটি বাইরের আবরণ তবু মানুষ স্বস্তি খোঁজে আর সেখানে নিজের শরীর ও মন দুটো ভিন্ন হলে মানুষ কেমনভাবে বেঁচে থাকবে! যারা এই শ্রেণিদ্বয়ের প্রতি বিদ্বেষ-অশ্রদ্ধা ও কটুক্তি করেন তিনি নিজেকে একবার তাদের জায়গায় বসিয়ে বিচার করুন। সমালোচনা করা সহজ৷
আমাদের সমাজে আজও মানুষকে তার মতো করে বাঁচতে দেওয়া হয় না। ব্যক্তি যতোই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করুন না কেনো, আনন্দে থাকুন না কেনো বাইরের মানুষ গিয়ে সেখানে খামচা মারে। যেন তার অন্যকে ভালো থাকতে দেখলে ঈর্ষা হয়। এই ভণ্ডামি-নোংরামি ছাড়তে হবে। একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যেমন সম্মানের অধিকারী তেমনই একজন ট্রান্সজেন্ডার নারীও সমাজে শ্রদ্ধার পাত্রী। তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করলে তবেই তারা এ সমাজের প্রকৃত অংশ হয়ে উঠবে। দেশ-দশের কল্যাণে সহোযোগী হয়ে উঠবে।
এ সমাজের নোংরামি, ভণ্ডামি আর কত? মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। মানুষ মাত্রই মানুষ। তার লৈঙ্গিক বৈষম্য বাইরের আবরণ মাত্র। তা নিয়ে এত মাতামাতি করার কোনো কারণ নেই। ফলে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া আবশ্যক। ট্রান্সজেন্ডার নারীদেরও সমাজে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখা হোক।
মনে রাখা আবশ্যক মানবজাতি সৃষ্টির সেরা জীব। আর এই সৃষ্টি স্রষ্টার দান। ব্যক্তির অন্তরের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেওয়া, শ্রদ্ধা করা একজন প্রকৃত ও বিবেচক মানুষের পরম ধর্ম। মানুষের প্রতি যতদিন এ সমাজ শ্রদ্ধায় অবনত না হবে ততদিন এ জাতি নিজেরাই নিজেদের সম্পর্কে কটুক্তি করবে। বহিরাবরণ দিয়ে মানুষকে যাচাই করবে! সমাজ থেকে এ ধরনের হীন মানসিকতা রুখে দিতে মানবিকতার শিক্ষা জরুরি। নারী নয় পুরুষ নয়, তৃতীয় লিঙ্গ নয়, ট্রান্সজেন্ডার নয়, প্রতিবন্ধী নয় সবাই মানুষ। এ সমাজের অংশ। তাই সমাজকে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি শ্রদ্ধা পরায়ণ হওয়া আবশ্যক। সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবন জীবনের জন্য। কপটতাকে তাই ছুটি দিতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। তবেই লৈঙ্গিক সমতা আসবে। সবার প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হবে।
ট্রান্সজেন্ডার, তীতৃয় লিঙ্গের হলেই তার প্রতি রূঢ় দৃষ্টি নয়। শিক্ষা-দীক্ষায় গড়ে উঠুক মানুষ। রাষ্ট্র-সরকার-প্রশাসন তাদের প্রতি বিনয়ী ও সহমর্মি হয়ে উঠুক। বিভাজন নয় মানুষ হয়ে উঠুক প্রতিটি মানবসন্তান। এ সমাজে সুদিন আসুক। মানুষ হয়ে উঠুক এ বিশ্বের প্রতিটি সন্তান।