বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব: স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী কে? মাঠের ও রাজপথের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সিংহভাগ মানুষই বলবেন, তাজ উদ্দিন আহমদ। অবশ্যই এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করারও আপাতত কিছু নেই। কিন্তু তার ব্যক্তিজীবনকে যেখানে রাজনৈতিক জীবনের নদীর গতির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে তাকে শেখ মুজিবুর রহমান থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির জনকে পরিণত করার কাজে অক্লান্ত শ্রম যিনি দিয়েছিলেন, তিনি নিঃসন্দেহে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
এই মহীয়সী নরী বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের লড়াই-সংগ্রামের পথে ছিলেন প্রেরণাদায়ী। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সমগ্র রাজনৈতিক জীবন ছায়া।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্ম ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। তার ডাকনাম ছিল রেনু। পরিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রেনু। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাংলার মানুষের কাছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নাম। যখনই বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হবে, তখনেই বঙ্গমাতার প্রসঙ্গও চলে আসবে।
ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে যখন বারবার পাকিস্তানি শাসকরা বন্দি করেছিল,তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছুটে যেতেন বেগম মুজিবের কাছে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পৌঁছে দিতেন। একইসঙ্গে দিতেন অনুপ্রেরণাও।
আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কিছু কুচক্রী মহল স্বাধীনতার সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বেগম মুজিব। তাঁর এই দৃঢ়চেতা অবস্থান বাংলার মুক্তিসংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যেও ছিল তার পরামর্শ। আন্দোলনের উত্তম সময়গুলোতে নিজ বাড়িতে পরম মমতায় নির্যাতিত নেতাকর্মীর আত্মীয়স্বজনদের আপ্যায়ন করাতেন। ইতিহাস বলছে, শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগতভাবে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন তিনি।
বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেকে এবং নিজের সন্তানদের গড়ে তোলেন। শুধু বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে নন, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন তার ছায়াসঙ্গী ছিলেন বেগম মুজিব। জীবনের শেষ মুহূর্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বঙ্গমাতার জীবনপ্রদীপ নিভে গিয়েছিল।
আজ সেই ভয়াল ১৫ আগস্ট। এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি এই মহীয়সী নারীকে।