ঈদের কেনাকাটায় নারীর নিরাপত্তায় সচেতন হোন
ঈদ বা যেকোনো বিশেষ অনুষ্ঠানকে ঘিরে পোশাক কেনাকাটা নিয়ে অভিমান করে আত্মহত্যার মতো ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। একশ্রেণীর কিশোরী-তরুণী-নারী আছেন, যারা এতটাই আবেগ আপ্লুত হয়ে যান বিষয়টিকে ঘিরে যে, সেখানে জীবনও তুচ্ছ হয়ে দাঁড়ায়! এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের বোধ একটুও জাগ্রত হয় না যে, একটি পোশাকের মূল্য কতটা! নিজের জীবনের থেকেও কি পোশাকের মূল্য এতটাই বেশি? এতকিছু বিচার-বিবেচনা না করে রাগ-ক্রোধ-ক্ষোভ ও অভিমানে নিজের জীবননাশ করে বসেন!
এমন একটা সময়ে আমরা বসবাস করছি, যখন চারিদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দামামা বাজছে। এরমধ্যে পরিবারের যিনি উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সংসার চালাতে তার কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। তবু নিজের সবটা দিয়ে সন্তান-স্ত্রীকে খুশি করার চেষ্টা করছেন। সবসময় যে সন্তান-স্ত্রীকে খুশি রাখা সম্ভব হচ্ছে এমনটাও নয়। কারণ দুর্মূল্যের বাজারে ইচ্ছে থাকলেও তিনি তা পারছেন না। শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে এমন নয়, বরং পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির পরিস্থিতি বা চিত্রই এখন এমন। তিনি নারী হোন বা পুরুষ। এমতাবস্থায় সবার আকাঙ্ক্ষা অনুসারে চাহিদা পূর্ণ হবে সে কথা না ভাবায় ভালো। তবু আমাদের দেশের এমন একটা অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে যে, সাধ্য না থাকলেও অন্যের দেখাদেখি নিজেকেও একই রকম সাজে সজ্জিত করার প্রবল বাসনা। সামর্থ্য ও চাহিদার ওপর কোনো লাগাম নেই অধিকাংশের। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটছেই!
তবে সন্তানের এমন চাহিদা ও প্রাপ্তির বিষয়ে শৈশব থেকেই শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। এখন প্রতিদিন আত্মহত্যার খবর শোনা যায়। এর মূল কারণ প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির তফাত। অর্থাৎ ব্যক্তি যা চান যখন তা না পান, তখনই তার জীবন বৃথা হয়ে যায়। এই তুচ্ছ একটি ধারণা প্রাণসংহার করছে। কিন্তু একবারও কী মনে করানো প্রয়োজন নেই যে, সব কেনো পেতে হবে? জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তার যদি সবটা পাওয়া যায়, তাহলে পরিশ্রম করে পাওয়ার তাগিদ শেষ হয়ে যাবে। যেটা যতটা কষ্টে অর্জিত তার মূল্যায়ন তত বেশি। সমাজের দিকে লক্ষ করলে তার ভুরি ভুরি প্রমাণ মিলবে। ফলে জীবনের সবটা পাওয়া উচিতও নয়। যতটুকু শ্রম, মেধা ও চেষ্টা ঠিক ততটুকুই প্রাপ্তি তবে সবসময় তা না ঘটলেও ধৈর্য ধারণ করা উচিত। পরবর্তীকালে আবারও চেষ্টার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জীবন একটা জার্নি। ট্রেনে উঠলেই আপনি গন্তব্য পৌঁছে যাবেন এমনটা ভাবা ভুল। কারণ মাঝপথে যেকোনো ঘটনা ঘটতেই পারে! তাই অকারণে, অযাচিতভাবে নিজের জীবনকে এতটা তুচ্ছ ভাবা থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় সুমাইয়া খাতুন (১২) নামের এক কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত সুমাইয়া উপজেলার বেলপুকুরিয়া ইউনিয়নের ছত্রগাছা গ্রামের জিয়াউর রহমানের মেয়ে। সে বেলপুকুর হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিকেল ৪টার দিকে ছত্রগাছা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারের দাবি, ঈদের কেনাকাটা নিয়ে বড় বোনের ওপর অভিমান করে সুমাইয়া। এরই জেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুঃখজনক!
ভেবে দেখা প্রয়োজন একটি পোশাক সর্বোচ্চ ১-২ বছর ব্যবহার করা যাবে। তারপর পোশাকের মূল্য সিকি পয়সাও নয়। তা সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে যাবে। আবারও সামর্থ্য ও রুচি অনুযায়ী নতুন পোশাক আসবে। কিন্তু এতকিছুর তোয়াক্কা না করে একশ্রেণীর বোকা মানুষ আছেন যারা তৎক্ষণাৎ প্রাপ্তিকে জীবনের সর্বোচ্চ অর্জন মনে করেন। আর তা না পেলেই জীবন সংহার করে বসেন!
সুমাইয়া মাত্র বারো বছরের এক কিশোরী। জীবনের সবটা বোঝার মতো বোধ তার এখনো তৈরি হয়নি। তবে যতটুকু বোধ তার হয়েছে সেখানে অপ্রাপ্তির সংজ্ঞা তার অজানা। অর্থাৎ সবসময় যে ইচ্ছে অনুযায়ী জীবনের সবটা ঘটবে না এই শিক্ষা তার নেই। ফলে বাস্তবতাবর্জিত এই কিশোরী নিজেকে শেষ করে দিলো! এক্ষেত্রে পরিবারের যারা অভিভাবক আছেন তাদের আগে বুঝতে হবে। সন্তানের যদি বোঝার মতো যথেষ্ট বয়স না হয় তবে ধীরে ধীরে তাকে বোঝাতে হবে। বিভিন্নভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। বকা দেওয়া বা মারধোর করার মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে কাছে বসিয়ে কোনো খাবার দিয়ে যতটা নরম সুরে বোঝানো সম্ভব বোঝাতে হবে। আর যারা প্রাপ্তবয়স্ক আছেন, তাদের বাস্তব জ্ঞান যথেষ্ট। ফলে নিজের জীবনের মূল্যায়ন করতে শিখতে হবে। কোনো তুচ্ছ চাহিদার জন্য প্রাণনাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সবার মধ্যে সুবোধ জেগে উঠুক। জীবনের মূল্য সম্পর্কে সচেতন হোক। আর এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে নিজে সাবধানতা অবলম্বন করুন ও অন্যকে সাবধান করে তুলুন।