Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গৃহ থেকে গণভবনে নারী

যুগের অববাহিকায় সিংহদ্বার থেকে শুরু করে গণভবন পর্যন্ত সর্বত্রই নারীদের বিচরণ। সম্প্রতি প্রতিটি স্তরেই নারীরা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। আবহমানকালের বদ্ধমূল সংস্কার ভেঙে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে অনেক নারী। তবে সত্যিকার অর্থে এই নারীদের জীবনযাত্রা পরিবর্তিত হলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতা এখনও কদর্য – বিকৃত- বিভৎস! নারীরা প্রতিনিয়তই ঘরে- বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। নিত্যদিনের পত্র- পত্রিকা খুললেই সামনে উঠে আসে এক একটি বিভৎস ঘটনার! বাল্যবিবাহ থেকে শুরু করে যৌতুকের বলি হওয়া, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, খুন কিবা ঘটছে না নারীর সঙ্গে।

একটি পরিবারের প্রধান নিয়ামক নারী। কারণ নারীই তার স্নেহ- মায়া- মমতার বন্ধনে অটুট রাখে পরিবারের বন্ধন। মূলত পরিবারকে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করতে নারীরা জীবনকে নিংড়ে নিঃশেষ করে দেয়। তাই বলাই চলে নারীই পরিবারের শক্ত খুঁটি। তবু এই নারীর ওপর পরিবার থেকেই শুরু হয় নির্যাতন! শৈশব থেকে একজন কন্যা শিশু সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গিকে উপলব্ধি করে বড় হতে থাকে আমৃত্যু তাকে সেই একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়। অর্থাৎ নারীর জীবনের যাপনটাই ধরাবাঁধা। পরিবার থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয় তার কন্যা শিশুর দৌড় কতটুকু হবে। কার সঙ্গে মিশবে, কার সঙ্গে কথা বলা যাবে, কী ধরনের পোশাক- পরিচ্ছদ পরিধান করবে ইত্যাকার নানাবিধ বিধিনিষেধ।

অধিকাংশ নারী সহোযোগিতা ছাড়াই নিজ আগ্রহে পরিবার-সমাজের শেকল ছিঁড়েছে।

কন্যাশিশুর চারপাশে একটি অদৃশ্য জাল সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। যে জালের আবরণ ভেদ করে বের হতে পারেন না নারীরা। আজও প্রতিটি স্তরের নারীকেই সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবতে হয়। নিজের খেয়াল- খুশি মতো জীবনকে যাপন করতে পারেন না। সেই নারী গৃহণী হোক বা কোনো সরকারি বড় কর্মকর্তা! তাই স্বাভাবিক দৃষ্টিতে নারীদের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসা দেখলেও মননে- মস্তিষ্কে কয়জন নারী সত্যিই পরিবার- সমাজের কথা না ভেবে শুধু নিজের স্বাধীন সত্তার প্রতি মনোনিবেশ করেছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এক্ষেত্রে বলা চলে, নারীরা যতোই তাদের প্রজ্ঞা – মেধা- দক্ষতা- যোগ্যতা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে সচেষ্ট হোক না কেনো তাকে নিচের দিকে টেনে ধরে তারই পরিবার – পরিজন। কারণ জন্মগতভাবে কিছু অধিকার তারা পেয়েই থাকে। ফলে একজন নারী যখন সঠিক জ্ঞানের সমুদ্রে বিচরণ করে সমাজের বেড়াজাল ভাঙতে চায় তখন আবেগ দিয়ে তাকে আঁটকে রাখে এই পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানই!

আজকাল সামজে নারীরা গৃহে যেমন যাপন করছেন তেমনই দেশের শীর্ষস্থানীয় পদও দখল করে আছেন। তবে সেক্ষেত্রে নারীর নেই কোনো স্বাধীনতা। যে মেয়ে বাবার বাড়ির কঠোর শাসনে গড়ে উঠেছে সেই নারীই আবার স্বামী- সন্তানের কাছে শাসন-শোষণের শিকার হচ্ছে। আজও এ সমাজের কালো অধ্যায় বাল্যবিবাহ! মেয়েরা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই পরিবার তাদের বাড়তি বোঝাটাকে ঝেড়ে ফেলার জন্য কন্যাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। না ভাবছেন সন্তানের শারীরিক- মানসিক পরিস্থিতির কথা, না দেখছেন তার ভবিষ্যৎ! এই নারীরাই যখন স্বামীর যৌতুক, নির্যাতন, নিপীড়নের চাপে পড়ে সংসার থেকে বেরিয়ে আসছে তখন পরিবার- সমাজ নারীটিকে তির্যক দৃষ্টিতে বিদ্রুপাত্মক বাণে জর্জরিত করছেন। কিন্তু যে বা যারা এই হীন মানসিকতার শিকার হচ্ছেন সেই নারীর কী দোষ?

তাকে তার জীবনকে গুরুত্ব দিতে শেখায়নি এ সমাজ। সর্বদা পুরুষের পদলেহন করে, প্রভু মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। আজকাল গৃহ নির্যাতন কম নয়! প্রতিদিনই পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, যৌতুকের চাপে স্ত্রী আত্মহত্যা এছাড়া নানারকম ঘটনার। কিন্তু সমাজের পরিবর্তনের কথা বারবার বললেও নারীরা দৃশ্যমান কতটুকু পরিবর্তনের সুফল ভোগ করছেন। আমার জানা মতে, প্রত্যেক নারীই একবাক্যে স্বীকার করবেন এ সমাজের কোনোই পরিবর্তন হয়নি। হ্যাঁ পদ- পদবী বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীরা স্বাবলম্বী হতে শিখছে। কিন্তু সেটা তো সমাজের বা পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নয়। বরং নারীর একান্ত চেষ্টার ফল। তবে হ্যাঁ এখানে কিঞ্চিৎ পরিবারের সদস্যদের সহোযোগিতার কথা অস্বীকার করা যায় না। তবে অধিকাংশ নারী সহোযোগিতা ছাড়াই নিজ আগ্রহে পরিবার- সমাজের শেকল ছিঁড়েছে। সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

গৃহে যেমন নারী বন্দিনী ঠিক তেমনই নারীরা যেনো সব ভেঙেও পুরুষতন্ত্রকে গুঁড়িয়ে দিতে অক্ষম। কারণ এই অপশক্তি এতটাই সংগঠিত যে, তারা নারীদের শুষে নিতে চায়। এ শ্রেণির বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা অধিক। গৃহে নারী নির্যাতনের শিকার। বাইরে অফিসের বস, কলিগ বা সহকর্মীর কুদৃষ্টির শিকার। তবু আজকের যতটুকু অর্জন নারী সমাজের তার সবটা কৃতিত্ব নারীরই।

প্রতিটি দিন নারী পৃথিবীর সুনির্মল বাতাসে বেড়ে উঠুক আপন মনের মাধুর্যতায়। নারী শক্তির জাগরণ ঘটুক।

তবে গৃহ থেকে গণভবনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এমনকি স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি, ব্যাংকের এমডি, সিনিয়র কর্মকর্তা, নেত্রী- অভিনেত্রী থেকে শুরু করে নারী উদ্যোক্তা, গৃহিণী সব নারীই পুরুষতন্ত্রের কদর্য মানসিকতার শিকার হন। ট্রলের শিকার হন। যোগ্যতা এবং পদমর্যাদা বলে দেশের শীর্ষস্থানীয় নারীরা সাধারণ জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। তবে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেহেতু মানুষের মানসিকতা বিচারের আরেকটি খাত ফলে শীর্ষ স্থানীয় এসব নারীদের পেজ বা আইডিতেও অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কদর্য মন্তব্য। এছাড়া অভিনেত্রী, মানবাধিকার কর্মী, অভিনেত্রী কেউ-ই এই বিকৃত মানসিকতা থেকে পরিত্রাণ পান না। এখন কথা হলো গৃহ থেকে গণভবনে কোন নারী এ সমাজের কদর্য মানসিকতা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন!

এ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। কারণ নারীদের যোগ্যতা- দক্ষতা- জ্ঞান- গরিমা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যদি সমাজের মানসিকতা না বদলাতে থাকে তবে বৃহৎ স্বার্থে নারীরা কাজ করতে সক্ষম হবে না। আর কাজ করলেও সেই কাজে শতভাগ অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। কারণ নারী সবসময়ই কুঁকড়ে থাকে পুরুষের কদর্য দৃষ্টি যেন তাদের ক্ষতবিক্ষত না করে সেজন্য। যখন নারীরা সত্যিকার অর্থেই বুঝতে সক্ষম হবেন এ সমাজে পুরুষ এবং নারী উভয়ই মানুষ রূপে স্বীকৃত, স্বাধীন জীবনযাপনে কোনো বাধা থাকবে না, রাস্তায় নারী ইভটিজিং এর শিকার হবে না, গণপরিবহনে যৌন নির্যাতন- ধর্ষণের শিকার হবে না, অফিসে নারী তার পুরুষ সহকর্মীর তীব্র- তীক্ষ্ণ কদর্য দৃষ্টিতে বিদ্ধ হবে না, স্ত্রী তার স্বামীর কাছে দাসী থাকবে না, যৌন হয়রানি ধর্ষণের শিকার হবে না ঠিক তখন এ সমাজ শোভিত হবে। সুন্দর এবং কল্যাণের তরে নারী- পুরুষ উভয়ই হাতে হাত রেখে চলতে শিখবে তখনই গৃহ থেকে গণভবনে নারী নিরাপদ। কোনো একটি দিনকে কেন্দ্র করে নয় বরং প্রতিটি দিনই নারীর জন্য হোক সম্মানের- শ্রদ্ধার- মর্যাদার। প্রতিটি দিন নারী পৃথিবীর সুনির্মল বাতাসে বেড়ে উঠুক আপন মনের মাধুর্যতায়। নারী শক্তির জাগরণ ঘটুক। একইসঙ্গে নারীর নিরাপদ বাসভূমি হোক পৃথিবীর প্রতিটি কোণ।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ