Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্ধকারে

তাহলে এই ক্লান্তিই কি আসলে একটা সুখ? সুখের আনন্দ কি তাহলে তখনই উপভোগ করা যায়, যখন সেটা প্রচুর দুঃখ ভেদ করে আসে?

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। আমি আর আমার এক সহপাঠী বেরিয়েছি বিকালে একটু হাঁটাহাঁটি করতে৷ দুজন অনেকক্ষণ ধরে গল্প করছি। একটা পোষা প্রাণী থাকলে জীবনে কিছু শান্তি আসে৷ সন্তান লালন-পালনের সুখের মতো।

আচ্ছা সবাই বলে, মাতৃত্ববোধ নাকি অনেক স্ট্রেসফুল। কিন্তু তা-ই যদি হয়, তাহলে মানুষের বারবার কেন এই স্ট্রেস নিতে ইচ্ছা করে? একের অধিক সন্তান যারা লালন-পালন করেন, তাদের কারো কারো মতে বসতবাড়ি বাচ্চাকাচ্চা ছাড়া শূন্য লাগে। কিন্তু একই সাথে বাচ্চাদের অনেক অনেক দুষ্টামি আর কোলাহলে ক্লান্তও হতে হয়।

তাহলে এই ক্লান্তিই কি আসলে একটা সুখ? সুখের আনন্দ কি তাহলে তখনই উপভোগ করা যায়, যখন সেটা প্রচুর দুঃখ ভেদ করে আসে?

আলাপ করতে করতে আমি আর আমার সহপাঠী একটা পরিত্যক্ত অন্ধকার প্রাচীন বাড়িতে গেলাম। শেওলা জমা সিঁড়ি ভেঙে একেবারে যা-তা অবস্থা। বাড়ির তিনতলায় একটা ছোট্ট শীর্ণ কুকুর দেখতে পেলাম। কুকুরটার কাছে যেতে ভয় লাগছে। অসম্ভব রাগী বলে মনে হচ্ছে সেটাকে।

আমি একটু একটু করে সামনে এগোচ্ছি । তার চোখ একদম স্থির, আমার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। খুব কাছে গিয়ে দেখলাম তাকে। মনে হলো, দীর্ঘদিন অত্যাচার আর অবহেলায় পরে আছে সে৷ নাকের মাঝখানে একটা বড় কাটাদাগ। শরীরের লোম কিছু জায়গায় উঠে ঝরে গেছে, আর খুবই নোংরা পরিবেশে সে থাকছে।

মনে হলো, তাকে নিয়ে গিয়ে একটা সুন্দর জীবন দিই। একটা ভালো আবহাওয়ায় থেকে ভালো ভালো খাবার খাবে। তাকে আমি সন্তানের স্নেহে লালন পালন করব।

কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরও যখন সে আর সঙ্গে আসতে সায় দিল না, তখন ভাবলাম থাক। আমি বরং ওর নিজের রাজত্বকে বাধা না দিই। চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।

কয়েকটা সিঁড়ি পার হওয়ার পর দেখি, আমার পেছনে পেছনে আসছে সে৷ খুব ভালো লাগছে দেখে। পরিত্যক্ত সেই দালান থেকে বের হয়ে দেখি, চারিদিকে মানুষের সমারোহ। ভিক্টোরিয়ান আমলের পুরানো দালান প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে৷

সুন্দর মেলাও বসেছে সেখানে। সবাই স্বাধীনভাবে যে যার মতো ক্যানভাসে ছবি আঁকছে, বই কিনছে, খাওয়াদাওয়া করছে।

মনে হচ্ছে, কী সুন্দর একটা আবহ। এখানে সবাই শিল্পী এবং শিল্পের কদর করার মানুষ। কেউ কাউকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারদাঙ্গা করার মনোভাব নিয়ে চলছে না। সবাই সবার বন্ধু। সবাই সবাইকে সাহায্য করে এখানে।

হাঁটতে হাঁটতে সেই মেলা পার হতেই ধুপ করে অন্ধকারে পড়ে গেলাম। এই পৃথিবী আর ওই পৃথিবী এক না। এই পৃথিবী যতটা স্যাঁতসেঁতে আর অন্ধকার, ওই পৃথিবী ততটাই আলোকিত আর প্রাণবন্ত।

দুই পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি। নাকি এটাই চলমান জীবন। জীবনানন্দ দাশের কবিতার কিছু পঙ্ক্তি মনে পড়ল আমার:

আমরা বেসেছি যারা অন্ধকারে দীর্ঘ শীত রাত্রিটিরে ভালো,

খড়ের চালের পরে শুনিয়াছি মুগ্ধরাতে ডানার সঞ্চার:

পুরোনো পেঁচার ঘ্রাণ; অন্ধকারে আবার সে কোথায় হারাল!

  • মাহজুবা তাজরি
ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ