Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উদ্যোগে স্বপ্নজয় ফারহানা মাহমুদের

প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস থেকে অনেকটা শুন্য থেকেই যাত্রা শুরু করেন আমাদের আজকের উদ্যোক্তা ফারহানা মাহমুদ এবং গড়ে তোলেন তার ফ্যাশন ব্রান্ড পূর্নি'স কালেকশন । উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন অনন্যা ম্যাগাজিন এর সঙ্গে,

প্রশ্নঃ ছোটবেলা কিভাবে কেটেছে আপনার?

 

খুব ছোটবেলায়  কম্পিউটারের  হাতেখড়ি পেয়েছি আমার একমাত্র বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। ভাইয়ার কাছ থেকেই কম্পিউটারের বেসিক থেকে শুরু করে টেকনোলজিক্যাল অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।ভাইয়ার মাধ্যমেই  ইন্টারনেট জগতের সাথে আমার পরিচয়। তখন থেকেই মনে হয়েছে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ঘরে বসেই অনেক কিছুই করা সম্ভব।
আমার আব্বু ছিলেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার যেমন ইউনিসেফ, ইউ এন ডিপি,ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট। আমি আমার আব্বুকে সব সময় দেখেছি তার সন্তানদের সমান চোখে দেখতে। ভাইয়া সব পারবে আমি মেয়ে হয়ে কম পারবো একটা কাজ এই ধরনের ব্যাপার কখনোই আমি আমার আব্বুর ভেতর দেখিনি।

প্রশ্নঃ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনের গল্প যদি বলেন?

 

আমি পড়াশুনা শেষ করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো চাকরী করতাম। আমি চাকরি করেছি একটানা অনেক বছর এবং বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে এক সময় চাকরি ছেড়ে দেই। এরপর বিশাল একটা গ্যাপ পড়ে গিয়েছিল। সাধারণত এ ধরনের গ্যাপ সৃষ্টি হলে নতুন করে প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে চিন্তা করাটা কঠিন হয়ে পরে অথবা চাকরির ইন্টারভিউতে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। একটা ব্রেকের পরে নতুন করে শুরু করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। যেহেতু উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে শুরু করেছি এরপর আমার কাজের স্বাধীনতা এবং ইচ্ছেশক্তি সবসময় ছিল বলেই আমাকে আর কখনোই পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিদেশ থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে এসে বিক্রি করলে প্রোডাক্টের কোয়ালিটির ব্যাপারটা কখনো নিজেদের হাতে রাখা যায় না। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকেই সব থেকে বেশি টাকা খরচ করে সাফার করতে হয় এবং কষ্ট করে সময় নিয়ে দাঁড় করানো একটা পেইজের সুনাম অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়। ক্রেতারা দেখা যায় পরবর্তীতে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে আর কেনাকাটা করার সাহস পান না। অন্যদিকে দেশীয় কাপড় এবং কারিগর দিয়ে কাজ করানোর ফলে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কোয়ালিটি মেইনটেইন করা সম্ভব।তাই দেশীয়  কাপড় নিয়ে কাজ করার আগ্রহ  আমার প্রথম থেকেই  ছিল। তাছাড়াও আমি চেষ্টা করি সব সময় অন্যকে অনুসরণ না করে নিজেই ক্রিয়েটিভ উপায়ে কিছু করার। চেষ্টা করেছি নিজস্ব স্টাইলে  বিজনেসের প্রচারণা করার; চেষ্টা করেছি নতুনত্ব আনার। পূর্নি'স কালেকশনস বর্তমানে বাংলাদেশে এমন একটি পেইজ যেটিতে এখন পর্যন্ত কোন হিউম্যান মডেল ব্যবহার করা হয়নি। পূর্নি'স কালেকশনস বাংলাদেশে সর্বপ্রথম দেশীয় কাপড় নিয়ে কর্পোরেট কালেকশনস এর কনসেপ্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছে ২০১৬ সালে। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমি আমার মতো করে রুচিসম্মত ভাবে উপস্থাপন করার।

 

উদ্যোগে স্বপ্নজয় ফারহানা মাহমুদের

 

প্রশ্নঃ উদ্যোক্তা ব্যবসায়ে অনুপ্রেরণার উৎস পেয়েছেন কোথায়?

 

আমার ব্যবসায়ের মূল অনুপ্রেরণা আমি পেয়েছি আমার হ্যাসবেন্ড শাকীব আহমেদ এর কাছ থেকে।তিনি সব সময় চেয়েছেন আমি যেন একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট মানুষ হিসেবে চলতে পারি। কারো উপর যেন কখনোই আমাকে নির্ভর করতে না হয়।তার সাপোর্ট না পেলে হয়তো আমার কখনোই জানা হতো না আমিও শূন্য থেকে একটা কিছু সৃষ্টি করে  সেটা অনেক দূর সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। হাসবেন্ডের সাপোর্টের ব্যাপারে উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, সে নিজেও একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করতো। সারাদিন অফিস শেষে টায়ার্ড হয়ে বাসায় ফিরে বাচ্চাদের দেখাশোনা করতো, যেন আমি আমার ব্যবসায়ের কাজ চিন্তামুক্তভাবে করতে পারি। শুধু তাই নয় যেকোনো ধরনের মানসিক সহযোগিতা এবং শুধু একজন হ্যাসবেন্ড নয় জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে তাকে আমি পেয়েছি।

 

প্রশ্নঃ আপনার ফ্যাশন ব্রান্ড পূর্নি'স কালেকশনস নিয়ে কিছু বলুন?

 

একটা সময় ছিল যখন দেশীয় ব্লকের কাপড় অথবা স্ক্রিন প্রিন্টের কাপড়কে অনেকেই মনে করতেন বাসায় পড়ার কাপড়। পূর্নি'স কালেকশনস সব সময় খাঁটি বাংলাদেশী প্রোডাক্ট, বাংলাদেশের কারিগর এবং দেশীয় সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে কাজ করে।  দেশীয় কাপড় পড়েও যে নিজেকে কর্পোরেট জগৎ এর সাথে আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া যায়, সেই আত্মবিশ্বাসটাই আমি সবসময় আমার ক্লায়েন্টদের দেবার চেষ্টা করি।

প্রশ্নঃ উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে তৈরী করতে পরিবার থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?

 

আমার জীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমার আম্মু আমার ছায়া হয়ে আছেন বন্ধুর মতো আমার অন্যতম শক্তি হয়ে। একটা মেয়ের জন্য একটা সুস্থ শিক্ষিত পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। পরিবারের সাপোর্ট থাকলে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।আমি নিজেকে এমন একটি পরিবারে বেড়ে উঠতে পেরেছি বলে নিজেকে গর্বিত মনে করি। উদ্যোক্তা হয়ে উঠবার পেছনে আমার বাবা – মা, ভাই এবং হ্যাসবেন্ড এই চারজন মানুষের অবদানের কথা কখনোই বলে শেষ করা যাবে না।আমি এই মানুষগুলোর কাছে সমান ভাবে কৃতজ্ঞ।

 

প্রশ্নঃ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য কি পরামর্শ দিবেন?
 

আমি আমার ব্যবসা শুরুর আগে প্রচুর রিসার্চ করেছি। আমি ঢাকার অলি-গলি ঘুরেছি। চক বাজার বা ইসলামপুরের আড়ত অথবা গুলশানের নামি-দামি সব স্টোর, বিক্রেতারা কিভাবে বিক্রি করে তাদের বিজনেস স্টাইলগুলো বোঝার চেষ্টা করেছি এবং সেই সাথে আমি একজন বিজনেস গ্রাজুয়েট আমি আমার বাস্তবিক জীবনের অভিজ্ঞতা এই ২টা  কম্বিনেশন রিসার্চ করার পর আমি আমার কাজ করার জন্য নিজস্ব একটা স্টাইল তৈরি করে নিয়েছিলাম। তরুণ উদ্যোক্তাদের আমি বলবো প্রাইস কম্পিটিশনে না গিয়ে প্রোডাক্টের মানের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হতে বা নিজস্বতা খুঁজে বের করতে। এবং প্রচুর ধৈর্য ধরতে হবে সেই সাথে ।তাহলেই একটা ব্যবসা অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই বিষয় গুলোই আমি মনে করি অনলাইন বিজনেসে সাফল্যের মূল মন্ত্র।

 

উদ্যোগে স্বপ্নজয় ফারহানা মাহমুদের

 

প্রশ্নঃ অনলাইন ব্যবসায় কুরিয়ার সেবা নিয়ে আপনার কি অভিমত?

 

আমরা যারা পুরোদমে অনলাইন বিজনেস করছি তাদের জন্য একটা ভালো কুরিয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটা কুরিয়ার কোম্পানি পারে আপনার অনলাইন বিজনেসকে বট গাছের মতো ছায়া হয়ে সাপোর্ট দিতে। আবার একটা কুরিয়ার কোম্পানি পারে আপনার বিজনেসকে এবং সেই সাথে  আপনাকেও মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। আমরা যারা অনলাইনে কাজ করি তাদের রাত দিন বলে কোন আলাদা শব্দ নেই। বরং, প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য মূল্যবান। সময় মতো ডেলিভারি, প্রোডাক্টের আপডেট চাওয়া, সেই সাথে ভালো ব্যবহার, নিশ্চিন্ত এবং সময় মতো পেমেন্ট, মার্চেন্ট এর প্রোডাক্টকে নিজের প্রডাক্ট ভেবে যত্নের সাথে ক্লায়েন্টের কাছে ডেলিভারি পৌঁছে দেয়া, এই ধরনের ক্ষুদ্র ব্যপার গুলোর উপরেই আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ীক জীবন ছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনেও ভালো থাকা এবং মন্দ থাকা নির্ভর করে।সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে দিন শেষে পরিবারের সাথে সময় কাটানোর  মূহুর্তে কুরিয়ারের টেনশন যেন জীবনে বাড়তি ঝামেলা নিয়ে না আসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা কুরিয়ার কোম্পানি গুলোর কাছে।

 

প্রশ্নঃ পূর্নি'স কালেকশনস এর প্রোডাক্ট ডেলিভারিতে কুরিয়ার সেবা কেমন পাচ্ছেন?

 

পূর্নি'স কালেকশনসের ডেলিভারি সুবিধা দিচ্ছে প্রভাতী কুরিয়ার লিমিটেড। প্রভাতী কুরিয়ার হচ্ছে এমন একটি কুরিয়ার যাদের সাথে কাজ করে আমার মনে হয়েছে আমার জীবন সহজতর হয়েছে। এবং প্রভাতীর ব্যাপারে আমার ক্লায়েন্টদের কোনো কমপ্লেইন এখন পর্যন্ত আমি পাইনি। সময়মত ডেলিভারী, ক্লায়েন্টের সাথে ভালো ব্যবহার আর বিশেষ করে এক্সচেঞ্জ প্রোডাক্ট এত দ্রুত নিয়ে আসে যার জন্য আমি তাদের সার্ভিসে খুব খুশি।

 

প্রশ্নঃ আগামী ৫ বছর পূর্নি'স কালেকশনস কে কোথায় দেখতে চান?

 

আমার শুরু থেকেই চিন্তা ছিল যে,আমার ব্যবসা অনলাইন নির্ভর হবে, কোনো আউটলেট থাকবে না। অনলাইনেই আমি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বো। আর আমার সবচেয়ে বড় যেই স্বপ্ন তা হচ্ছে আমাদের দেশীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করানো। পূর্নি'স কালেকশনসকে আন্তর্জাতিক ব্রান্ড হিসেবে দেখতে চাই।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ