নিজে নারী-বিদ্বেষী হলেও একজন প্রেমিকা চাই প্রত্যেক পুরুষের!

নারী-স্বাধীনতা নিয়ে তুমুল অবিশ্বাসী মানুষেরও প্রেমিকা চাই। আস্থা রাখার মতো মানুষ চাই। তিন বেলা নিজের রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘরদোর গোছানো আর তার খেয়াল রাখার মতো একজন নারী চাই।
নিজের ঘরে গিয়ে মা অথবা বউকে ছাড়া এতটুকু পানিও গ্ল্যাস ঢেলে খেতে তার পুরুষত্ব যায়যায় অবস্থা। কিন্তু যখনই কোনো নারী এত কিছুর দায়িত্ব স্বেচ্ছায় পালন করতে করতে একটা সময় একটু সম্মান আর শ্রদ্ধাবোধ প্রত্যাশা করে বা নিজের এবং সব নারীর অধিকার আর সচেতনতা নিয়ে আওয়াজ তোলে, তখন এই সমাজ তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। তার অস্থিগত নারী-বিদ্বেষ নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। তখন সে শুরু করে নারীর পোশাক এবং তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আঘাত করা। কারণ, এগুলো করলে নারীরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে কারবার করায় ব্যস্ত থাকবে৷ নারী আর সম-অধিকার নামক একটা বিষয় নিয়ে কাজ করার সময় পাবে না।
এ-ছাড়া, এই সব সমস্যা নিয়ে যখন একজন নারী আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে পড়ে থাকবে, তখন নারী ইমোশোনালি আনস্টেবল থাকবে। আর ইমশোনালি আনস্টেবল থাকা মানে হলো আরেকজনের প্রতি একটা মানসিক ভরসার জন্য আকুতি-মিনতি করা৷ এই মানসিক ভরসাটা দিতে পারাই হলো একটা নিদারুণ ক্ষমতা। যে ক্ষমতার জেরে আরেকজন মানুষের সমস্ত কিছু নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসা যায়।
তখন এই নারী-বিদ্বেষী মনোভাব গর্বের সাথে চর্চা করে পুরুষেরা। এ-ছাড়া দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া, সামাজিকভাবে হেয় করা, মানসিকভাবে হেয় করার প্রবণতা তো আছেই।
এই সব বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে গেলেই সব নারীকে নারীবাদী বলে একটা আলাদা সংখ্যালঘুর কোটায় নামিয়ে দেয় পুরুজ-সমাজ৷ অনেকে আবার নিজের ঘরে নারী বিষয়ক কোনো বই বা ম্যাগাজিন নিষিদ্ধ বলে ঘোষনা করেছে। কারণ, তাদের অনেকেরই ধারণা, এই সব বই বা ম্যাগাজিন পড়লে মেয়েদের মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। তখন তারা নিজেদের অধিকার চেয়ে বসবে, তখন তো সেটা সমস্যা হয়ে যাবে। অধিকার চাইলে অধিকার না দেওয়ার ভাণ হলেও তো করতে হবে অন্ততপক্ষে।
কিন্তু নিজের ঘরে নারী বিষয় বই নিষিদ্ধ থাকলেও নিজের ঘরে নারীকে কটূ-বাক্য বলা কিংবা কথায় কথায় তাকে ছোটো করার মতো কথা কখনো বন্ধ হয় না।
বাসে সিট নিয়ে নারীদের সমতার দাবিকে উপহাস করা হয়। কিন্তু যৌন হয়রানি যখন হয় পাবলিক বাসে কিংবা রাস্তাঘাটে, তখন তো কোনো টু-শব্দ করতেও দেখা যায় না কাউকে।
কোনো সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সেই নারীকে নিয়ে কুৎসা রটানোও বন্ধ হয় না। বরং এটা এখন স্বাভাবিক একটা বিষয় হয়ে গেছে। আর গালাগাল করলে তো বাংলা ব্যাকরণের 'ক' থেকে 'চ' সব গালিই ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু এই পুরুষ নিজেই একজন সঙ্গী চায় ঠিকই৷ নিজের সঙ্গীর কোনো মান বজায় রাখতেও পারে না তারা৷ প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থায় রেখে দিতে চান নিজের সঙ্গীটিকে। যে নারী নিজের অধিকার চায়, তাদেরকে দুই চোখে দেখতে পারে না তারা। নারীকে কিভাবে চলতে হবে, কিভাবে বলতে হবে, কিভাবে থাকতে হবে সব কিছুরই নিয়ম বেঁধে দেয় তারা৷ তাতে যা হওয়ার তা-ই হোক। তবু একজন নারী চাই জীবনে তাদের।