Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক নারীর ‘রানী’ থেকে ‘কুইন’ হয়ে ওঠার যাত্রা

কাল রানীর বিয়ে। বিয়ের সব প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ। সদ্য আমেরিকা থেকে ফিরেছে বিজয় অর্থাৎ বর। প্রেমের বিয়ে তাদের। এমন সময় হঠাৎ বিজয় রানীকে রেস্টুরেন্টে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠালো, খুব জরুরি কথা আছে। রানী তার ছোট ভাইয়ের সাথে গেলো সেখানে। গিয়ে যা শুনলো তাতে রানীর পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল। বিয়ের মাত্র একদিন আগে বিজয় বলল রানীকে সে বিয়ে করতে পারবেনা। প্রথমে বিশ্বাসই হলোনা রানীর। বিয়ে না করার কারণ হল তাদের স্ট্যাটাস নাকি আর মিলছেনা। রানী তার বিদেশ ফেরত স্বামীর সাথে ভবিষ্যতে খাপ খাওয়াতে পারবেনা। রানী বারবার বিয়ে করার অনুরোধ করলেও বিজয় অস্বীকৃতি জানায়। পরে কাঁদতে কাঁদতে সে বাড়ি চলে আসে।

 

এর মধ্যেই রানীর বাড়িতে বিজয়ের বাড়ির লোক ফোন করে জানায় বিয়ে ভাঙ্গার কথা। মুহুর্তেই আনন্দের পরিবেশ থেকে বাড়িতে নেমে পড়ে বেদনার ছায়া। রানী বাড়িতে এসে একটি ঘরে নিজেকে আটকে ফেলে। সবাই বারবার বলার পরেও সে ঘর খুলেনা। ঘরে বসে তাদের সেই পুরনো প্রেমের কথা মনে পড়ে যায়। দীর্ঘদিনের প্রেম তাদের। তার বাবার বন্ধুর ছেলে বিজয়। প্রথমদিকে বিজয়ই রানীর প্রেমে পড়েছিলো এবং সেই প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো। পরিবার থেকেও তাদের বিয়ে ঠিক করেছিলো। এরপর বিজয় পড়ালেখার জন্য আমেরিকায় চলে যায়। আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর থেকেই তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়। 

 

খুবই সহজ-সরল মেয়ে রানী। বাবা-মার বড় মেয়ে। তার একটি ছোট ভাই আছে। তার বাবা মিষ্টি ব্যবসায়ী। রানী ভালো মিষ্টি বানায়। মধ্যবিত্ত পরিবারেই তার বেড়ে ওঠা। খুবই ভদ্র প্রকৃতির মেয়ে রানী।

 

একদিন পর রানী তার ঘরের দরজা খোলে। ঘরে রাখা তার টিকিট দেখে তার মনে পড়ে যায় বিয়ের পরের দিন তাদের প্যারিসে হানিমুনে যাবার ব্যথা ছিল বিজয়ের সাথে। ছোটো থেকেই তার প্যারিসে যাবার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই সে বিজয়ের সাথে সেখানে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তা তো আর হলোনা। পরে সে সিদ্ধান্ত নিলো সে একাই যাবে প্যারিসে ঘুরতে। একাই যাবে তার হানিমুনে। বাড়িতে তার এই সিদ্ধান্ত জানালে সবাই অনেক চিন্তায় পড়ে যায় যেই মেয়ে বাইরে কোথাও একা একা যায়না সে প্যারিস থেকে কীভাবে একা একা ঘুরে আসবে। কিন্তু তার খুশির কথা ভেবে সবাই রাজি হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় তার প্যারিস যাত্রা।

 

ফ্লাইট থেকে প্যারিসে নেমে তার কেমন যেন ভয় ও আশঙ্কা লাগছিলো। তাই সে ঐদিনই ইন্ডিয়াতে ফিরতে চায়। কিন্তু টিকিট না থাকায় তাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলে। এরপর রাস্তায় সে একবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। কিন্তু সেই যাত্রায় সে বেঁচে যায়। তারপর তার এক বান্ধবী বিজয়লক্ষ্মীর সাথে সে দেখা করে এবং তার কাছে আশ্রয় নেয়। সেখানে সে আইফেল টাওয়ারে যায় বিজয়লক্ষ্মীর সাথে। বারে গিয়ে ইচ্ছামতো নাচে। তার মনে পড়ে যায় এক অনুষ্ঠানে নাচার জন্য বিজয় তাকে খুব বকেছিলো। তার প্যারিস এতো ভালো লাগে যে পরে কিছুদিন সে ফ্রান্সে থেকে যায় এবং ঘুরে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুদিন ঘুরে এরপর সে আমস্টার্ডামে যায় ঘুরতে। সেখানে তার নামে আগেই রুম ঠিক করা থাকে। বিজয়লক্ষ্মীর কাছ থেকে বিদায় নেয় সে আমস্টার্ডামের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে আসার সময় বিজয়ের ফোন আসে তার কাছে। বিজয় তার সাথে দেখা করতে চায় সেও প্যারিসে। কিন্তু রানী ফোন কেটে দেয়।

 

আমস্টার্ডামে যেই লজে সে ওঠে সেখানে তাকে তিন পুরুষের সাথে রুম শেয়ার করতে হয়। সিঙ্গেল রুম চাইলে লজে রুম খালি না থাকায় তাকে ওই এক রুমেই তিনজনের সাথে থাকতে হয়। তিনজন আবার ভিন্ন ভিন্ন দেশের। অলেকজেন্ডার রাশিয়ার, তাকা জাপানের এবং টিম আফ্রিকার। প্রথমে তাদের থেকে দূরে দূরে থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় রানীর। তারা একসাথে ঘুরে বেড়ায়, গল্প করে, খাওয়া-দাওয়া করে। সেখানে সবাই তাকে কুইন নামে ডাকে। কারণ রানীর ইংরেজি কুইন। এরমধ্যে বিজয় বারবার ফোন দেয় কিন্তু সে ধরেনা। এরমধ্যে সেখানে একটা স্ট্রিট ফুড প্রোগ্রামে রানী অংশ নেয় এবং তার রান্না অনেকের পছন্দ হয় সে কিছু ক্যাশও পায়। এরপর চারজন একসাথে বেড়ানোর সময় বিজয়ের সাথে রানীর দেখা হয়ে যায়। এখন রানী আর আগের মতো নেই। আগের চেয়ে অনেক স্বাবলম্বী হয়েছে সে। পরেরদিন আবার বিজয়ের সাথে দেখা করতে আসে রানী। বিজয় বারবার ক্ষমা চায় এবং আবার বিয়ে করার আশ্বাস দেয় এবং তাকে সাথে নিয়ে যেতে চায়। রানীর সেখানে আসার জন্য তার বন্ধুদের সাথে কন্সার্টে যাওয়া মিস হয়ে যায় তার। কিন্তু হঠাৎ আবার সে বিজয়ের কাছ থেকে উঠে চলে যায় তার বন্ধুদের কাছে কন্সার্টে যাবার জন্য। 

 

এরপর বাড়ি ফেরার সময় এয়ারপোর্টে তার পরিবার তাকে নিতে আসে। তাকে দেখে তার পরিবার কিছুটা অবাক হয়ে যায়। অনেক আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে এবার ফিরেছে রানী। প্রথমেই সে বিজয়ের বাড়িতে যায়। বিজয়ের সাথে দেখা করে। যে মেয়ে একা একা কখনো বের হয়নি সে এবার একা ফ্রান্স ঘুরে এলো। কোথাও যেতে হলেও সে ভাইকে নিয়ে যেত, সে একাই বিজয়ের বাড়ি থেকে ফেরার আশ্বাস দেয় পরিবারকে। এভাবে সে ভীতু থেকে দৃঢ় ও সাহসী নারী হয়ে উঠলো।

 

গল্পটি ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া বিকাশ বেহলের চলচ্চিত্র ‘কুইন’ এর। চলচ্চিত্রটিতে রানীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কঙ্গনা রানাওয়াত এবং বিজয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজকুমার রাও। চলচ্চিত্রে সকলের অভিনয় অসাধারণ ছিল। ঐ বছর ছয়টিরও অধিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে এই চলচ্চিত্রটি। ভারতে ‘রানী’ থেকে প্যারিসে গিয়ে ‘কুইন’ হয়ে ওঠার এই সফর সত্যিই অসাধারণ। সবারই এই চলচ্চিত্রটি দেখা উচিত।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ